দারসুল হাদিস

দারসুল হাদিস
 

হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

-ড. মোঃ হাছিনুর রহমান

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর  (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর সংস্থাপিত। যথা- (১) আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল- একথার সাক্ষ্য দেওয়া। (২) নামাজ কায়েম করা। (৩) জাকাত প্রদান করা। (৪) হজ্জ করা  এবং (৫) রমজান মাসে রোজা রাখা। (সহিহুল বুখালি, হাদিস নং-৭)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ছিলেন দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ) -এর ছেলে এবং নবী করীম (সাঃ)- এর বিশিষ্ট সাহাবী। তিনিও পিতার মতো একজন উঁচুস্তরের আলেম এবং বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন ফকিহ, মোফাচ্ছির ও মুহাদ্দিস। তিনি মর্যাদা ও পূর্ণতার উচ্চ আসনে সমাসীন ছিলেন। তাঁর এ মর্যাদায় অনেকে ঈর্ষা করতেন। ইমাম মালেক (রহ.) এর মুয়াত্তায় বর্ণিত আছে যে, তিনি শুধু সূরা বাকারা নিয়েই ১৪ বছর গবেষণা চালিয়েছিলেন। হাদিসশাস্ত্রেও তাঁর দখল ছিলো পূর্ণমাত্রায়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে মোট ১০৩৬টি মতান্তরে ১৬৩০টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বুখারি ও মুসলিমের ঐকমত্যের হাদিস ১৭০টি। এছাড়া বুখারি ৮১টি এবং মুসলিম ৩১টি হাদিসে ভিন্নমত পোষণ করেন। হিজরি ৭০ সনে ৮০ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। মহানবী (সাঃ) ছাড়াও তাঁর শিক্ষকগণের মধ্যে ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) , হযরত উমর (রাঃ), হযরত উসমান (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ), হযরত আয়েশা (রাঃ), হযরত হাফসা (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত বেলাল (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ)-এর ছাত্রগণের মধ্যে ছিলেন নাফে (র), হাফস (র), সাঈদ ইবনে যুবায়র (র). ইতরামা (র), মোজাহিদ (র), তাউস (র), আতা (র) প্রমুূখ তাবেয়ি।
যেহেতু এ হাদিসে হজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাই প্রমাণিত হয় যে, অত্র হাদিস ৯ম হিজরির শেষ দিকে অথবা ১০ হিজরিতে বর্ণিত হয়েছে। কারণ এ কথা  স্বীকৃত ও প্রমাণিত ও প্রমাণিত যে ৯ম হিজরিতে হজ ফরজ করা হয়েছে। তা ছাড়া নামাজ, জাকাত ও সওম ইতঃপূর্বেই ফরজ ঘোষিত হয়েছিল।
হাদিসটির গুরুত্ব ইসললাম নামক সুবিশাল এবং সুদৃঢ় প্রাসাদের ভিত্তি হচ্ছে উল্লিখিত পাঁচটি। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। এই পাঁচটি বস্তুকে পূর্ণ ইসলাম বলা হয়নি। কোন ব্যক্তি যেমন পাঁচটি স্তম্ভ স্থাপন করে পূর্ণ প্রাসাদ নির্মাণের দাবি করতে পারে না তেমনি কোন ব্যক্তি এ পাঁচটি বিষয় পালন করলে পূর্ণ মুসলিম বলা যায় না। তবে কথা সর্বজনস্বীকৃত যে , কোনো বস্তুর ভিত্তি যত মজবুত হবে ঐ বস্তুর পরিপূর্ণ রূপও তত শক্তিশালী হবে। বস্তুত ইসলামে এ হাদিসটির গুরুত্ব অপরিসীম।
আল্লাহ তায়ালা প্রিয় বান্দা হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো হজ। ইসলামী জীবনব্যবস্থায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীরা মক্কা শরিফে অবস্থিত ইসলামের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সাধনার স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো পরিদর্শন করে এক অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা ও আধ্যাত্মিক উপলব্ধিও অধিকারী হয়। হজ মানবজাতির আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নতি সাধন করে।

হজ শব্দের অর্থ- ইচ্ছা করা, সংকল্প করা, সাক্ষাৎ করা, To make decision, To meet.
হজ শব্দের পারিভাষিক সংজ্ঞা সম্পর্কে ‘তানযীমুল আশতাত’ গ্রন্থকার বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত কতিপয় কার্যাবলির মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শনার্থে পবিত্র বায়তুল্লাহ পরিদর্শন করাকে হজ বলা হয়।’’

হজ্জের ধর্মীয় গুরুত্বঃ কাবাগৃহের সাথে মুমিনের সম্পর্ক প্রতিটি দিবা-রাত্রিতে রয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও মুনাজাত দোয়া করার সময় এই গৃহের দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘‘বার বার তোমার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখছি। অতএব আমি অবশ্যই তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাব, যা তুমি পছন্দ করা। সুতরাং তোমার চেহারা মসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফিরাও।’’ (সূরা বাকারা: ১৪৪) ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে হজের অনেক গুরুত্ব রয়েছে, যা নিম্নরূপ:

আল্লাহর নির্দেশ পালনঃ আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক সামর্থ্যবাম মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ ফরজ করেছেন। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে- ‘‘আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।’’ (সূরা আলে ইমরান: ৯৭) হজ পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর এ নির্দেশ পালিত হয়।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনঃ হজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। কেননা একমাত্র্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই মুসলমানগণ ঐতিহাসিক মরুর পানে ছুটে যায়। যেমন-‘আর মানুষের নিকট হজের ঘোষণা  দাও; তারা তোমাদের কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং ‍কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে।’ যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাজিরর হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছিলেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুস্থ-দরিদ্রকে খেতে দাও।’ (সূরা হজ্জ: ২৬-২৭)

রাসূল (সা) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি হজব্রত পালনের ইচ্ছা পোষণ করে সে যেন অবিলম্বে তা করে। (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস নং ১৪৭২) রাসূল (সা) বলেন, ‘‘যুক্তিসঙ্গত কোন প্রয়োজন, অত্যাচারী শাসক অথবা কঠিন ব্যাধি হজব্রতে বাধা না হওয়া সত্ত্বেও হজ সম্পাদন না করে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে ইয়াহুদি অথবা খ্রিষ্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও আমার কিছু আসে যায় না।’’ (সুনানু দারেমি, হাদিস নং ১৮৩৯)

আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায়ঃ হজ পালনের মা্ধ্যমে আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করা যায়। ইহরাম, তাওয়াফ, তালবিয়া, কুরবানিসহ, হজের যাবতীয় অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে মানবমন প্রভুপ্রেমে গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়। ফলে বান্দা তার প্রভুর নিবিড় সান্নিধ্য প্রত্যক্ষভাবে করতে পারে।

ইবরাহিম ও ইসমাইলের স্মৃতিস্মারকঃ হজ মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহিম (আ) তদীয় স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাইলের স্মৃতিস্মারক। হজ পালনের মাধ্যমে তাদের ত্যাগের কাহিনী মুসলমানদের স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। কুরআনের ভাষায়, ‘‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা বাকারা:১৫৮)

পাপ মোচনঃ হজ এমন উত্তম একটি ইবাদাত অনুষ্ঠান যার মাধ্যমে বান্দা তার প্রভুর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। বরং এটি ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম যার ওপর ইসলাম নামক প্রাসাদটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেক হাদিসে রাসূল (সা)  স্বীয় উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। এবং হজের অসীম সওয়াব ও পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন তিনি আমর ইবনুল আস (রা) কে সম্বোধন করে বলেন,‘‘তুমি কি জান না যে ইসলাম, হজ ও হিজরত প্রতিটি উহার পূর্বের কৃত গুনাহ বিধ্বস্ত বা বিলীন করে দেয়? (সহিহুল মুসলিম, হাদিস নং- ১৭৩)
তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্ঠিলাভের জন্য হজ সম্পাদন করল তাতে কোন অশ্লীল কাজ করল না, আর পাপ কাজ করল না। যে সদ্যপ্রসূত সন্তানের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে এলো।’’ (সহিহুল বুখারি, হাদিস নং- ১৪২৪)।
রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘মাবরুর (কবুল) হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। দু’টি উমরা বা এক উমরা পরবর্তী উমরার মধ্যবর্তী পাপসমূহকে মোচন করে দেয়।’’ (মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং - ৭০৫০)।
তিনি আরো বলেন, ‘‘আরাফার দিবসে আল্লাহ তায়ালা হাজীদের নিয়ে ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন , তিনি বলেন, দেখ আমার বান্দারা এলোকেশ বিশিষ্ট ও ধুলেলা মলিন অবস্থায় সকাল বেলায় বহুদূর থেকে সমবেত হয়েছে। তোমরা সাক্ষী থাক আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম।’’ (শুআবুলর ঈমান, হাদিস নং- ৩৯০)।

হজের সামাজিক গুরুত্বঃ বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ হজ বর্ণবৈষম্য দূরীকরণের একটি বিধানসম্মত আন্তর্জাতিক কর্মসূচী। এটা মুসলিম মিল্লাতের মধ্যকার সকল বর্ণ, গোত্র ও জাতিগত বৈষম্য দূরীভূত করে।

সাম্যের বিকাশঃ হজে উঁচু রাজা-প্র্রজা, মনিব-ভৃত্য, আরব-অনারব, ধনী-দরিদ্র সকলে একই প্রকারের পোশাক পরিধান করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভেদাভেদের সকল প্রাচীর ভেঙে সাম্য্য মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান প্রভুর বিধান পালন করে থাকে। হজ ব্যতীত প্রথিবীর কোন অনুষ্ঠানে সাম্যের এ নজির পরিদৃষ্ট হয় না।

পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টিঃ হজের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মুসলমান পবিত্র মক্কা নগরীতে একত্রিত হয়। এসময় তাদেরর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ভাবের আদান-প্র্রদান ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।

পাস্পরিক কল্যাণ কামনাঃ হজের অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পিত মানুষ পরস্পরে। আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ কামন করে এবং শান্তি কামনায় সকলে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে।

শৃঙ্গলাবোধ জাগ্রতঃ সমগ্র বিশ্বের মুসলমান হজের প্রতিটি কাজ নিয়মতান্ত্রিকভাবে পালন করে শৃঙ্গলাবোধের পরিচয় দেয়। সমাজ জীবনে এ শৃঙ্গলাবোধের গুরুত্ব সীমাহীন।

বিশ্বভ্রাতৃত্ব সৃষ্টিঃ হজ কেবল ঈমানকেই বলিষ্ঠ করে না। বরং এটা সমগ্র মুসলমান জাহানকে ঐক্যবদ্ধ করার পন্থা হিসেবেও কাজ করে। হজ বিশ্বভ্রাতৃত্ব সৃষ্টিতে অতুলনীয় ভূমিক পালন করে। প্রথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুসলমানগণ এ সময় মক্কা শরিফে একত্রিত হয়ে জাত-গোত্র ও বর্ণভেদ ভুলে একই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

বিশ্ব সম্মেলনঃ হজ মুসলিম উম্মার জন্য এক বিশ্ব সম্মেলন। মুলমান হজের দিনগুলোতে দুনিয়ার সকল প্রান্ত হতে আল্লাহর ঘর জিয়ারত করার জন্য মিলিত হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ সম্মেলনের গুরুত্ব অপরিসীম।

আন্তর্জাতিক ঐক্য সৃষ্টিঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী-‘‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না।’’ (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)।
তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু সম্মিলিতভাবে ধারণ কর। পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। হজে মুসলমানদের মাঝে আন্তর্জাতিক ঐক্য আনয়ন করতে পারে।

হজের রাজনৈতিক গুরুত্বঃ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে হজের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যেমন-
ঐক্য ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টিঃ হজের সময় মুসলমানেরা বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের নব প্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে একতাবদ্ধ হয়, এ ঐক্য এতই পূর্ণাঙ্গ যে এখানে প্রভু ও ভৃত্যের পার্থক্য করা যায় না।

বিশ্ব মুসলিমের বৃহৎ সম্মেলনঃ হজ মুসলমানের ঐক্য সম্মেলন। অন্য কোন কারণে এত অধিক সংখ্যক মুসলমান কোথাও মিলিত হয় না।। আল্লাহ বলেন, ‘‘নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়, যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে।’’ (সূরা আলে ইমরান: ৯৬-৯৭)।

দীন কায়েমের শক্তিশালী মাধ্যমঃ মুসলমানদের রাজনীতি হবে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক। হজের মাধ্যমে মুসলমানগণ আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার দৃপ্ত শপথ নিতে পারে। এরশাদ হচ্চে- ‘‘তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না।’’ (সূরা শুরা: ১৩)।

আল্লাহর খিলাফত প্রতিষ্ঠাঃ হজ পৃথিবীতে ইসলামী খিলাফতের একটি আদর্শ শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেরণা জোগায়। আল্লাহ বলেন, ‘‘আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জমিনে একজন খলিফা সৃষ্টি করছি।’’ (সূরা বাকারা: ৩০)

ভৌগোলিক জ্ঞান লাভ হয়ঃ হজ হাজীদের ভৌগোলিক জ্ঞানের সীমা সম্প্রসারিত করে। বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক অবস্থান জল-বায়ু রীতি-নীতি ও আচার ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞান লাভের সুযোগ সৃষ্টি করে। কাজেই মুসলমানদের ভাবগত ও কৃষ্টিগত প্রগতির পথে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।

হজের উপকারিতাঃ হজের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘‘আর মানুষের নিকট হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে।’ যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাজির হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেলেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিন সমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুস্থ-দরিদ্রকে খেতে দাও।’ (সূরা হজ: ২৭-২৮) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, হজের মাধ্যমে পার্থিব ও পরকালীন উপকারিতা রয়েছে। অতঃপর  পরকালীন উপকার হচ্ছে-আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। আর পার্থিব উপকারিতা হচ্ছে- কুরবানির গোশত, অন্যান্য জবেহকৃত জন্তু এবং ব্যবসা-বাণিজ্য। (তাফসিরু ফাতহিল ক্বাদির)।
ইহলৌকিক উপকারিতা অর্জনের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই যে, তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আগ্রহ অনুসন্ধান করবে।’’ (সূরা বাকারা: ১৯৮) আয়াতটি নাজিলের শানে নুজুল বর্ণনায় ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, ইতঃপূর্বে মানুষ হজের মওসুমে হজব্রত পালনে গমনকারী ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য করা থেকে বিরত থাকতেন। তখন এ আয়াত নাজিল করে আল্লাহ তায়ালা হজের সফরে পার্থিব উপার্জনে ব্যবসা-বাণিজ্য  করাকে বৈধ সাব্যস্ত করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘‘এসব চতুষ্পদ জন্তুতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে, তারপর এগুলোর কুরবানির স্থান হবে প্রাচীন ঘরের নিকট।’’ (সূরা হজ: ৩৩)

সমাপনীঃ হজ ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম ইবাদাত। পবিত্র মক্কা হলো মহান প্রভুর  অসংখ্য নিদর্শন ইবরাহিম ও ইসমাল (আ) এর স্মৃতিময় লালনভূমি। এটি বিশ্ব মিলনকেন্দ্র, বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার এক অপূর্ব সুযোগ আর অন্য কোনো সম্মেলনে নেই। মাওলানা মোহাম্মাদ আলী বলেন, No other institution in the word has the wonderful in uence of the Hajj in leveling all distinctions of race, color and rank.

লেখক: প্রভাষক, আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ধাপ-সাতগাড়া বায়তুল মোকাররম মডেল কামিল মাদরাসা, উপশহর, রংপুর।

Post a Comment

Previous Post Next Post