গল্পঃ নিউটন মামা- মোঃ ছাইদুর রহমান


নিউটন মামা
মোঃ ছাইদুর রহমান

আমার ছোট মামার নাম ওলিউর হলেও আমরা তাকে নিউটন মামা বলে ডাকি। মামার বিজ্ঞান প্রবণতা সেই ছোট থেকেই। অদ্ভুদ এক স্বভাব মামার। কথায় কথায় বিজ্ঞানকে টেনে নিয়ে আসেন। ব্যাপারটা তার পছন্দ হলেও একটু বিরক্ত হতো অন্যরা। একদিন আমাদের ভাবুক নিউটন মামা পানি পান করতে করতে ভাবলেন, পানি অণুগুলো চার্জ সৃষ্টির মাধ্যমে কম খরচে জ্বালানি তৈরি করা যায় কিনা। এমন সময় এক ভিখারি এসে করুণ কণ্ঠে বলল, দুদিন ধরে কিছু খাইনি, দুইটা ট্যাকা ভিক্ষা দেন আল্লাহ আপনার ভালো করবো। নিউটন মামা স্বভাব বশেই বিজ্ঞাসা করলেন, আপনি দু’দিন ধরে কী ধরনের খাবার খাননি? ভিখারি বলল, মানে তো বুঝলাম না। মামা বুঝিয়ে বললেন, মানে আপনি যে ধরনের খাবার খেতে পাননি তা কি কঠিন, তরল নাকি বায়বীয়? ভিখারি বলল, সেটা তো জানি না, গরিব মানুষ লেখাপড়ার সময় পাই নাই। তাই এইসব ভালো বুঝি না। মামা বললেন, খাবারটা শক্ত না নরম? তখন ভিখারি বলল, শক্তই মনে হয়, ভাত তো শক্ত। মামা বললেন, দুইদিন না খেলে শরীরের কোষ কলার বিশেষ কোনো ক্ষতি হয় না, আমাদের শরীরে দৈনন্দিন কোষ সৃষ্টি হয় আর ধ্বংস হয়। দুদিন না খেলে আপনি পেট ব্যথায় ভুগলেও তেমন কোনো অসুখ হবে না। ভিখারি রাগ দেখায়ে বলল, দ্যাহেন আপনার সাথে কথা বলে আমার ভিক্ষার মূল্যবান সময় হারাইছি, এহন ট্যাকা না দিলে ছাড়ুম না। ট্যাকা দেয়া লাগবই। মামা বললেন বেশ আপনি কত টাকা চান?
-আপনার যা ইচ্ছা, তবে দশ টাকার নিচে দেয়া যাবে না।
-দশ টাকার নোট তো নেই, পাঁচ টাকার কয়েন আছে। বলতে হবে, কয়েন বা পয়সাটা কী কঠিন, তরল নাকি গ্যাসীয়?
-কঠিন!
-এবার বলোতো, এটা ধাতু না অধাতু?
-অধাতু!
-মামা বেশ রেগেমেগে বললেন, আরে গর্দভ, তোমার শরীরে অণু-পরমাণু ভেঙে আয়ন বানাবো আমি। এটা ধাতু দেখতে পাচ্ছ না এর মধ্যে উজ্জলতা বিদ্যমান।
-আমি মূর্খ-সূর্খ মানুষ, ক্যামনে এগুলান জানমু।
-মূর্খ ‍তো বুঝলাম, সূর্খ আবার কী? এ ধরনের উল্টাপাল্টা দিরুক্তি শব্দ ব্যবহার করবে না।

তারপর ভিখারি রেগে আগুন হয়ে বলল, আচ্ছা বুঝলাম এবার ট্যাকা দ্যান।
-আগে বলো এটা ক্ষার ধাতু, মৃৎক্ষার ধাতু নাকি কয়েন ধাতু?
ভিখারি রাগান্বিত হয়ে বলল, আরে মিয়া, আমার লগে মশকরা করেন? ট্যাকা লাগবো না, আপনার টাকার গুল্লি মারি। তখন মামাও রেগে আগুন হয়ে বললেন, রাগ দেখোও আমার সঙ্গে? আমার হাতের বিভব শক্তিকে গতি শক্তিতে রুপান্তরিত করে হাতের পেশিশক্তি ব্যভহার করে এমনভাবে আঘাত করব যে, তোমার শরীরের হাড়গুলোর অণু-পরমাণু বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। এমনকি তোমার ডিএনএ কে আমি চেঞ্জ করে দেবো। মেরে তোমার জড়তা কাটিয়ে দেবো। এমনভাবে মারব যে , একসঙ্গে শব্দশক্তি, তাপশক্তি, চৌম্বকশক্তি, আলোকশক্তি, সবই উৎপন্ন হবে। শরীরের সব গতিশক্তি স্থির হয়ে যাবে। মারার ফলে এমন একটি তরল বের হবে, যা একটি সংযোজক কলা এবং ক্ষারীয় ঈষৎ লবণাক্ত ও লাল বর্ণের যোজক কলা। তোমাকে আরো এমন কষ্ট দেবো যে, তুমি পদার্র্থের চতুর্থ অবস্থা প্লাজমাতে পড়বে। তার ফলে তোমার শরীরে গলন হবে। তখন বুঝবে গলন ও গলনাঙ্ক কাকে বলে। তোকে তোকে মেরে আমি এত ছোট পরমাণু করব যে, এভোগেড্রো সংখ্যাও তার জায়গা হবে না। তোর শরীরে যোজক কলা দিয়ে অ্যাসিড বানাবো আমি, তখন বুজবি রাসয়নিক বিক্রিয়া কী! এত কিছু শোনার পর ভিখারি পুরোই ঘাবড়ে গেল এরপর সেই ভিখারিটাকে আর কখনো দেখা যায়নি এই এলাকায়।

সপ্তম শেণি, ভোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়

Post a Comment

Previous Post Next Post